বণিক বার্তা রিপোর্ট ◑ ছাত্র-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। স্বৈর...
বণিক বার্তা রিপোর্ট ◑
ছাত্র-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। স্বৈরশাসকের তকমা নিয়ে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী আশ্রয় নেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পরদিনই রাষ্ট্রপতির আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শাস্তি মওকুফ ও মুক্তির ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তাকে এ দণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।
দলের প্রধানের মুক্তিতে ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপির কর্মীদের মধ্যে এখন বেশ চাঙ্গা ভাব। খালেদা জিয়ার মুক্তির পরদিন ৭ আগস্টেই এক মহাসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। জেলমুক্ত খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে এখন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে দলটি। দীর্ঘদিন আটক থাকা নেতাকর্মীরা ছাড়া পেয়ে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের প্রধানকে ঘিরে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছেন তারা। দলের শীর্ষ পর্যায় পুনর্গঠন থেকে শুরু করে যেকোনো কর্মসূচি বা কার্যক্রমে তার কাছ থেকে সরাসরি নির্দেশনাও নিচ্ছেন।
অন্যদিকে আকস্মিক ক্ষমতাচ্যুতি ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগে আওয়ামী লীগ এখন এক প্রকার বিপর্যস্ত। শেখ হাসিনা দেশে নেই। দলের কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতারাও আত্মগোপনে। পুরোপুরি নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় রাজনীতির ময়দানে সংগঠিত হতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতেও দলটির নেতাকর্মীদের তেমন কোনো কর্মসূচির আয়োজন করতে দেখা যায়নি। দলটির কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকেও সেখানে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কিছু মানুষ জড়ো হলেও সেখানে আগে থেকে উপস্থিত অনেকের বাধার মুখে তারাও শোক জানাতে পারেননি। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ এখন একপ্রকার অস্তিত্বের সংকটে পড়ে গেছে।
তাদের কারো কারো ভাষ্যমতে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সিদ্ধান্তটি ছিল একপ্রকার রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল। দেশে থেকে গিয়ে তিনি যদি কারাবরণও করতেন, তাকে মুক্তির দাবি তুলে আওয়ামী লীগের মাঠে নামার সুযোগ ছিল। দলের নেতাকর্মীদের কাছেও বার্তা যেত যে কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদের ত্যাগ করেননি তিনি। কিন্তু তার দেশত্যাগের সিদ্ধান্তে তারা এখন পুরোপুরি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদেরও বড় অংশের আস্থা হারিয়েছেন তিনি। যদিও শেখ হাসিনা নিজেই এক সময় বারবার বলেছেন ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের জন্য ক্ষমতার চেয়ার ও কারাগার পাশাপাশি থাকে’।
ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে একাধিকবার বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউকেই সংকটকালীন সময়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের সংকট সামনের দিনগুলোয় তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনীতিতে দলটির প্রত্যাবর্তনকে আরো কঠিন করে তুলবে শেখ হাসিনার নামের সঙ্গে যুক্ত হওয়া স্বৈরশাসকের তকমা।
যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, এ মুহূর্তে টিকে থাকাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় লড়াই। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক নেতা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সংকট মোকাবেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এখন টিকে থাকাই আমাদের প্রাথমিক লড়াই। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
অনেকটা একই বক্তব্য রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আরেক নেতা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমরা খুব কঠিন সময় পার করছি। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একটি রাজনৈতিক দলের যেটুকু শক্তি থাকা প্রয়োজন, সেটি আমাদের নেই। দলের নেতাকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হঠাৎ এমন পরিস্থিতি আমাদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। স্বাভাবিক কারণেই আমরা একটি স্বল্পকালীন সংকটে পড়েছি। তবে এটা খুব শিগগির কাটিয়ে উঠব বলে আশা রাখি।’
রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সর্বসাকুল্যে দেড় বছরের মতো গৃহবন্দি ও কারান্তরীণ ছিলেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে এখন পর্যন্ত কারা ও গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় বছর। আরও পড়ুন
COMMENTS